আদার ঔষধি গুন এবং আদার উপকারিতা
ভূমিকা
আদা আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত এবং ভেষজ উপাদান। আদা আমরা সাধারণত রান্নার কাজে মশলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। যদিও আমরা আদাকে রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকি কিন্তু আদার একটি মেডিকেল সাইন্সের নাম রয়েছে সেটি হচ্ছে জিনজারাল। আদা আমাদের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকে সুস্থ করতে সাহায্য করে। হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে আদার ব্যবহার হয়ে আসছে। আধা আমাদের শরীরের বেশ কিছু সমস্যার সমাধান ইনস্ট্যান্ট করে থাকে।
এই আর্টিকেলে আমরা আদার সম্পর্কে অনেক কিছু লিখবো, আদার গুনাগুন, আদার উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদেরকে লিখে জানাবো। আপনারা আমাদের এই লেখাগুলো পড়বেন এবং আপনাদের মতামত জানাবেন কেমন লাগলো।
আদার ঔষধি গুন
প্রায় সময়েই মানুষের মুখের মধ্যে ইনফেকশন হয় বা দাঁতের মধ্যে কেভিটির মত সমস্যা রয়েছে। আপনি প্রায়ই সেটা অনুভব করতে পারেন যে, আপনার মুখ থেকে একটি দুর্গন্ধ বেরিয়ে আসছে, সে ক্ষেত্রে কিন্তু আপনি আদা ব্যবহার করতে পারেন।
পানির মধ্যে আদা বা আদার পাউডার মিশিয়ে সারাদিন যদি দুবার কুলকুল করতে পারেন তাহলে কিন্তু আপনার মুখের দুর্গন্ধ চলে যাবে। এছাড়া আমাদের মুখের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে দেখা যায়, যেমন ধরুন আমাদের দাঁতের মাড়ির মধ্যে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন প্রায়ই হয়ে থাকে। এই ইনফেকশনের মাধ্যমে আপনার মারির যে ক্ষতি হয় তা কিন্তু নয়, আপনার সেই কারণে চোয়ালের হার পর্যন্ত ডেমেজ হতে পারে। তাই আপনি যদি নিয়মিত আদার মিশ্রিত পানি দিয়ে কুলকুল করতে পারেন তাহলে কিন্তু এই ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন থেকে আপনি মুক্ত থাকতে পারবেন।
অনেক সময় আপনি খেয়াল করে থাকবেন যে, আপনার পেটে বদহজম বা গ্যাস হয়ে থাকে। হঠাৎ করে পেট পাক দিয়ে উঠে অনেক সময় দেখা যায় যে, বমি বমি ভাব হয়, বমি আপনার যে কারণেই হোক না কেন সেই সময় যদি আপনি এক টুকরো আদা মুখে রাখতে পারেন অথবা সেই আদা যদি আপনি চিবিয়ে রস খেতে পারেন তাহলে কিন্তু আপনার সেই সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে।
যদি আপনি আপনার শরীরের মাংসপেশিতে আঘাত পান সেই আঘাতের জন্য আপনার পেশীতে যদি ব্যথা হয় বা আপনি সারাদিন হার্ড পরিশ্রম করেন অথবা বিভিন্ন প্রকারের ব্যায়াম করেন সেই কারনে যদি আপনার মাংসপেশীতে বা মাসুলে ব্যথা হয় সেই ব্যথা সারানোর জন্য যদি এক টুকরো আদা চিবিয়ে খান তাহলে কিন্তু আপনার ব্যথা আস্তে আস্তে কমে যাবে।
আপনি আরেকটি কাজ করতে পারেন সেটি হচ্ছে যে, যেখানে আপনার ব্যথা সেই জায়গায় কিছু পরিমাণ আদা কুচি কুচি করে কেটে বা পেস্ট বানিয়ে গরম পানির সাথে মিশিয়ে সেই পানি আপনার ব্যথার জায়গায় ধরে রেখে ছেক দিতে পারেন। সেই গরম চেকের জন্য উপশম হতে পারে আপনার ব্যথা। আদা কে গ্রেড করে অথবা কুচি কুচি করে কেটে গরম পানির মধ্যে রেখে অল্প পরিমাণ দারুচিনির পাউডার দিয়ে মিশ্রিত করে একটু গরম করে একটি কাপড় ভিজিয়ে আপনার ব্যথার জায়গায় ধরে রাখতে পারেন দেখবেন যে, ব্যথা আস্তে আস্তে কমে গেছে। সারাদিন যদি আপনি দুই তিন বার সেই ব্যথার জায়গায় ছেক দিতে পারেন তাহলে কিন্তু আপনি দেখবেন আপনার অনেক আরাম লাগবে এবং ব্যথা উপশম হয়ে যাবে।
আপনার যদি আর্থ্রাইটিস কোনো ব্যাথা হয় তাহলে আদার ব্যবহারের কোন জুড়ি নেই। আপনার যে জায়গায় ব্যথা হচ্ছে বা জয়েন্টে ব্যথা হচ্ছে সেই জায়গায় আদা কে পেস্ট করে আপনি আপনার ব্যথার জায়গায় লাগিয়ে দিতে পারেন দেখবেন যে আস্তে আস্তে আপনার সেই ব্যথা কমে যাবে। অনেক জায়গায় দেখা যায় যে, বাজারে বিভিন্ন ধরনের মলম বা পেস্ট পাওয়া যায়, সেগুলো আপনারা জয়েন্টের ব্যথায় লাগিয়ে থাকেন সেগুলো না লাগিয়ে আধার পেস্ট যদি লাগান তাহলে কিন্তু আপনার অনেক কাজে লাগবে।
আমরা সারাদিন যে খাবার খাই সেই খাবারে যে ধরনের গ্লোকজ তৈরি হয় সেই গ্লোকোজ কিন্তু রক্তের সাথে মিশে যায় আর সেই গ্লোকোজ কে ভাঙ্গার জন্য প্রয়োজন হয় ইনসুলিনের, যে সমস্ত ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়াবেটিক টু রোগে ভুগছেন তাদের ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেই ইনসুলিনের একটিভিটি কম হচ্ছে তাই ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে আপনি যদি নিয়মিতভাবে আদা খেতে পারেন। আদা আপনার শরীরের ভেতরে ইনসুলিনের একটিভিটি বাড়িয়ে দেয় যাতে আপনি আপনার ইনসুলিন শরীরে ঠিকঠাকভাবে কাজ করতে পারে।
আপনার রক্তের মধ্যে যে গ্লোকোজ মিশে আছে এই গ্লোকজকে ভেঙে এনার্জি বানিয়ে আপনার শরীরের রক্তের সেলে পৌঁছে দিতে পারে আদা। তাই আপনি যদি টাইপ টু ডায়াবেটিকের একজন প্রেসেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে আপনি নিয়মিতভাবে আদা খেতে পারেন। আপনার ব্লাড সুগারকে কন্ট্রোল করার জন্য সারাদিনে দুই টুকরা আদা খাবেন দেখবেন আদা আপনার ব্লাড সুগারকে কন্ট্রোল করতে সাহায্য করবে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের দাবি সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে ৩০ মিনিটের মধ্যে যদি আদা খেতে পারেন। তাহলে আদা আপনার ডাইবেটিক কন্ট্রোলের জন্য বেশি সাহায্য করতে পারে।
মহিলাদের ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে মেয়েদের তলপেটে ব্যথার একটা অস্বস্তি ভাব হয়। এটা সাধারণত কমন ব্যাপার। যেটিকে মেডিকেল ভাষায় বলা হয় দিসমেনুরিয়া। ঋতুস্রাব চলাকালীন সময় মহিলাদের শরীরে এক ধরনের কেমিক্যাল রিলিজ হতে থাকে যার নাম হলো পোষ্টের গ্লেন্ডিং। তাই ঋতুস্রাবের তলপেটের ব্যথা যদি আপনি উপশম করতে চান তাহলে প্রতিদিন সকালে চায়ের সাথে আদা মিশিয়ে খাবেন দেখবেন যে আপনার ব্যথা আর থাকবে না।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে আপনি যদি নিয়মিত ৩মাস একনাগারে প্রতিদিন সকালে আদা খেতে পারেন তাহলে কিন্তু আপনার শরীরে যে ব্লাড প্রেসার আছে সেই ব্লাড প্রেসার কমিয়ে দিবে। মানুষের শরীরে যে সমস্ত খারাপ বাজে কোলেস্টেরল রয়েছে সেগুলোকে আদা খেলে কমিয়ে দিবে।
আপনার যদি বদহজম বা গ্যাসের কোন সমস্যা থাকে তাহলে আপনি নিয়মিত যদি আদা খান তাহলে আপনার গ্যাসের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আপনি যদি খাওয়ার আধা ঘন্টা আগে এক টুকরো আদা চিবিয়ে খেতে পারেন তাহলে কিন্তু আপনার সেই গ্যাসের সমস্যা থাকবে না এবং পেটের হজম শক্তি বাড়িয়ে দেবে।
আমরা জানি যে সিজনাল বিভিন্ন ধরনের গলা ব্যাথা ঠান্ডা কাশি ইত্যাদি হয়ে থাকে সেই ঠান্ডা ব্যাথা কাশির জন্য যদি আমরা আদা, লবন পানি দিয়ে গরম করে, সেই গরম পানি দিয়ে মুখের ভিতর গেরগেল করি তাহলে কিন্তু আমাদের সেই গলা ব্যথা কাশি ইত্যাদি থাকবে না
আদার উপকারিতা:
আদা একটি জনপ্রিয় মশলা যা রন্ধনসম্পর্কীয় উপাদান এবং ঔষধি উভয় উদ্দেশ্যেই বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটিতে বেশ কয়েকটি বায়ো অ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে যা এর সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সুবিধাগুলিতে অবদান রাখে। এখানে আদার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা আলোচনা করা হলোঃ
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিঃ আদার মধ্যে জিঞ্জেরোলের মতো যৌগ রয়েছে, যার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাব রয়েছে। এটি আদাকে প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে সম্ভাব্য সহায়ক করে তোলে, বিশেষ করে অস্টিওআর্থারাইটিস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো পরিস্থিতিতে।
পরিপাক সহায়কঃ আদা খেলে হজমকারী এনজাইমগুলির উত্পাদন করে এবং পরিপাক ট্র্যাক্টের মাধ্যমে খাবারের চলাচল বাড়িয়ে হজমে সহায়তা করতে পারে। এটি বদহজম এবং বমি বমি ভাব উপশম করতেও সাহায্য করে।
বমি বমি ভাব এবং সকালের অসুস্থতাঃ গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেস এবং মোশন সিকনেসের কারণে বমি বমি ভাব দূর করতে আদা সেবনে উপশম হয়।
পেশীর ব্যথা হ্রাসঃ কিছু গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে আদা খেলে তীব্র ব্যায়ামের ব্যথা, পেশীর ব্যথা এবং অন্যান্য ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
নিম্ন রক্তে শর্করঃ গবেষণা ইঙ্গিত করে যে আদা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে, সম্ভাব্যভাবে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপকার করে।
হার্টের স্বাস্থ্যঃ আদা কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উন্নতি করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি হ্রাস করে, হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।
আদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী:
আমি কি প্রতিদিন আদা খেতে পারি?
হ্যাঁ, দুই টুকরো পরিমাণে আদা খাওয়া বেশিরভাগ মানুষের জন্যই নিরাপদ। যাইহোক, যদি আপনার কিছু চিকিৎসা শর্ত থাকে বা নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করে থাকেন, তাহলে এটিকে আপনার খাদ্যের দৈনিক তালিকায় অন্তরভুক্ত করার আগে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।
আমি কীভাবে আমার ডায়েটে আদা অন্তর্ভুক্ত করতে পারি?
আদা একটি মশলা হিসাবে খাবারে যোগ করা যেতে পারে, চায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি এটি বিভিন্ন রেসিপিতে স্বাদযুক্ত খাবার হিসাবেও ব্যবহার করতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় আদা কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, আদা প্রায়ই গর্ভাবস্থায় সকালের অসুস্থতা উপশম করতে ব্যবহৃত হয়। যাইহোক, গর্ভবতী মহিলাদের আদা ব্যবহার করার আগে তাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
আদা কি ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে?
কিছু গবেষণা পরামর্শ দেয় যে আদা বিপাক বৃদ্ধি এবং ক্ষুধা হ্রাস করে, ওজন হ্রাসের উপর সামান্য প্রভাব ফেলতে পারে। যাইহোক, এটি একটি সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়ামের বিকল্প নয়।
আদা কি রোগ নিরাময় করতে পারে?
আদা অসুস্থতার জন্য একটি নিরাময় নয়, তবে এটি স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করতে পারে এবং নির্দিষ্ট লক্ষণগুলি উপশম করতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ হিসেবে আদা ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ, প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।
রসুন খেলে শারীরিক দূর্বলতার সুস্থতা আনে
অল্প পুঁজিতে কিভাবে কোটি টাকা লাভ সম্ভব
কোন মন্তব্য নেই