Header Ads

সঞ্চয়পত্র কিনার নতুন নিয়ম ২০২৩

সঞ্চয়পত্র কিনার নতুন নিয়ম ২০২৩

ভূমিকা

আমরা সকলে জানি যে বাংলাদেশ সরকারের মালীকানাধীন প্রতিস্টান জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর এর অধীনে সঞ্চয়পত্র কিনে বিভিন্ন মেয়াদে আপনি দ্বিগুন লাভ পেতে পারেন। অহেতুক এদিক সেদিক আপনার কস্টের অর্জিত অর্থ ইনভেস্ট করে ক্ষতির সন্মুখীন হবেন না। ব্যবসা করলে অবশ্যই লাভ লস আছে। তাই ব্যবসা করে কল্পনায় অনেক লাভ করা যায় কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব না কারন একটি জরীপে দেখা গেছে যে শতকরা ১০০জন নতুন ব্যবসা শুরু করলে শতকরা ৮০জন ব্যবসা থেকে লস দিয়ে চলে যায় আর ২০জন ভাগ্যবান লাভ করে ব্যবসা চালিয়ে যায়। 

সুতরাং কোনটি ভাল আপনি পছন্দ করেন। সঞ্চয়পত্র কিনে ইনভেস্টম্যান্ট করে লাভ পাবেন সীমিত কিন্তু ঝুঁকি নাই। তবে বেশী টাকা হলে নিষ্কটক জমির উপর বিনিয়োগ করতে পারেন। কয়েক বছরের মধ্যে দ্বিগুন তিনগুন হতে পারে। তবে সীমিত আয়ের গ্রাহকদেরকে বলবো আপনারা নিম্ন লিখিত চার প্রকার সঞ্চয়পত্রের স্কিম রয়েছে আপনার পছন্দমত ক্রয় করতে পারেন। (১) ৩মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, (২) ৫বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, (৩) পরিবার সঞ্চয়পত্র, (৪) পেনশনার সঞ্চয়পত্র।


১) ৩ মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র

৩মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং ৩মাস অন্তর পারিবারিক সঞ্চয়পত্র। পারিবারিক সঞ্চয়পত্র শুধুমাত্র মহিলারা ক্রয় করতে পারবেন এবং জেনে রাখা ভাল যে, পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে লাভের পরিমান বেশী। এটি সরকার মহিলাদেরকে প্রাধান্য দিয়ে এই পারিবারিক সঞ্চয়পত্র স্কিমটি চালু করেছে। তবে পুরুষরাও এই ৩মাস অন্তর সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন। তবে লাভ একটু কম পাবেন।

২) ৫বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র

৫বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন ১০টাকা, ৫০ টাকা, ১০০টাকা, ৫০০টাকা, ১০০০টাকা, ৫০০০টাকা, ১০,০০০টাকা, ৫০,০০০টাকা, ১,০০,০০০টাকা, ১০,০০,০০০টাকা, ২৫,০০,০০০টাকা।

 মুনাফার হার

১৫লক্ষ টাকা পর্যন্ত শতকরা ১১দশমিক ২৮পার্সেন্ট, ৩০লক্ষ পর্যন্ত ১০দশমিক ৩০পার্সেন্ট, ৩০লক্ষ১টাকা হতে তদূর্ধ্ব ৯দশমিক ৩০পার্সেন্ট, তবে এটা জেনে রাখা ভাল যে আপনি যদি সঞ্চয়পত্র ১বছরের আগে ভাংগান তাহলে আসল টাকা চেয়ে কিছু কম পাবেন কিন্তু ১বছরের পর ভাঙ্গাইলে
 ৯দশমিক ৩৫পার্সেন্ট পাবেন। আপনার সঞ্চয়পত্র মেয়াদ উর্ত্তীনের আগে ভাংগাইলে বিনিয়োগের পরিমান এবং বছর হিসাবে মুনাফা কম পাবেন।

৩) পরিবার সঞ্চয়পত্র

বাংলাদেশের সে কোন নাগরীক ১৮ বছরের উর্ধ্বে মহিলা, প্রতিবন্ধি (পুরুষ অথবা মহিলা) এবং ৬৫ বছরের উর্ধ্বে (পুরুষ অথবা মহিলা)  এই পরিবার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন। 
১০হাজার, ২০হাজার, ৫০হাজার, ১লক্ষ, ২লক্ষ, ৫লক্ষ, ১০লক্ষ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন। একসাথে ৪৫লক্ষ টাকা পর্যন্ত পরিবার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যাবে এবং মাসিক মুনাফা উত্তোলন করতে পারবেন।

৪) পেনশনার সঞ্চয়পত্র

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়িত্তশাসিত কর্মকর্তা, কর্মচারী, সুপ্রীম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিগণ, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যগণ, মৃতচাকুরিজীবীর পারবারিক পেনশন সুবিধাভগী স্বামী/স্ত্রী/সন্তান উনারা সকলেই পেনশনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন।
৫০হাজার, ১লক্ষ, ২লক্ষ, ৫লক্ষ, ১০লক্ষ পেনশনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন তবে সর্বোচ্চ একক নামে ৫০লক্ষ পর্যন্ত ক্রয় করতে পারবেন। কিন্তু আনুতোষিক ও সর্বশেষ ভবিষ্যত তহবিল হতে প্রাপ্ত অর্থের বেশী নয়।

সঞ্চয়পত্র কিনার নতুন নিয়ম ২০২৩

সঞ্চয়পত্র কিনার জন্য আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটো কপি, আপনার নিজের এবং নমিনির এক কপি ছবি লাগবে, সঞ্চয়পত্র ৫লক্ষ টাকার মধ্যে হলে আয়কর বা টিন সার্টিফিকেট লাগবেনা কিন্তু  সঞ্চয়পত্র ৫লক্ষ টাকার উপরে হলে টিন সার্টিফিকেট লাগবে। তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের বর্তমান মেয়াদ শেষে পাবেন শতকরা ১১দশমিক শূন্য চার পার্সেন্ট। ১৫লক্ষ টাকার উপরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে শতকরা ১০%পার্সেন্ট পাবেন। আর যারা ৩০লক্ষ টাকা উপরে বিনিয়োগ করবেন তারা পাবেন শতকরা ৯%পার্সেন্ট।

উৎসে কর

৫বছর মেয়েদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩বছর মেয়াদী মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং ৩ বছর মেয়াদী পারিবারিক সঞ্চয়পত্র ৫লক্ষ টাকা বিনিয়োগ পর্যন্ত মুনাফার উপর ৫% উৎসে কর কর্তন করা হবে এবং এর অধিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার উপর ১০% উৎসে কর কর্তন করা হবে।

কত টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন

১লক্ষ, ২লক্ষ, ৫লক্ষ, ১০লক্ষ, ১৫লক্ষ, ২০লক্ষ, ৩০লক্ষ, ৫০লক্ষ থেকে শুরু করে তার উর্ধ্বে আপনার যত সম্ভব সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন। তবে আপনার ইনকাম সোর্স এবং আয়কর সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। ১লক্ষ থেকে ৫লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে আয়কর সার্টিফকেট লাগবেনা। এটা মনে রাখবেন যে, আপনাকে একটি নির্দিস্ট হারে যত টাকা লাভ পাবেন তার পার্সেন্টিজ হিসাব করে উৎসে আয়কর কেটে রাখা হবে। যত বেশী লাভ পাবেন তত বেশী উৎসে আয়কর সরকারকে দিতে হবে।

টাকা লেনদেন কিভাবে করবেন

নতুন নিয়মে টাকার লেনদেন নগদে হয়না তা সম্পূর্ণ ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। আপনি যত টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করবেন সেই পরিমান টাকার চেক এবং নির্ধারিত ফরম পূরণ করে সংশ্লিস্ট অফিসে জমা দিতে হবে। সঞ্চয় অফিস বা পোস্ট অফিস সোনালী বাংকের মাধ্যমে আপনার চেকের টাকা নগদায়ন করা হবে। ফরম এবং চেক ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার সঞ্চয়পত্রের ডকুম্যান্ট পেয়ে যাবেন। আপনার লাভ তিন মাস অন্তর অন্তর আপনার ব্যাংক একাউন্টে অটোমেটিক জমা হয়ে যাবে। মেয়াদ শেষে আপনার মূল টাকা অটোমেটিক আপনার ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়ে যাবে।


সঞ্চয়পত্র কোন কোন অফিস থেকে ক্রয় করতে পারবেন? 

জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর প্রত্যেক জেলা বা উপজেলা অফিস, বাংলাদেশের সকল পোস্ট অফিস, বাংলাদেশ বাংকের শাখা সমূহ ও তফসিলি ব্যাংক সমূহ থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যায়।


সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের উর্ধ্বসীমা

১। ব্যক্তির ক্ষেত্রেঃ একক নামে ৩০লক্ষ এবং যুগ্ন নামে ৬০লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন।২। প্রতিস্টানের ক্ষেত্রেঃ উর্ধ্বসীমা নেই।

সুযোগ সুবিধা

আপনার সঞ্চয়পত্রের জন্য নমিনী নিয়োগ করতে পারবেন। সঞ্চয়পত্র দাতা যদি কোন কারনে মৃত্যুবরণ করেন তখন সাথে সাথে নমিনী প্রাপ্ত ব্যক্তি টাকা উত্তোলন করতে পারবেন অথবা মেয়াদ শেষে টাকা তোলতে পারবেন। পোস্ট অফিসে লাইনে না দাঁড়িয়ে বাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। আপনি শতকরা কত লাভ পাবেন তা সংশ্লিস্ট অফিস থেকে জেনে নিবেন কারন এটা পরিবর্তনশীল। সঞ্চয়পত্র অফিসের নতুন নিয়মে সম্পূর্ণ অনলাইনে দ্রুত সার্ভিস পাবেন।

উপসংহার

বাংলাদেশ জাতীয় সঞ্চয়পত্র বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের প্রত্যেক সাধারণ নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করে রেখেছেন। যে কেউ উপযুক্ত কাগজপত্রাদি জমা দিয়ে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন এবং তা থেকে যে লাভ পাবেন তা দিয়ে তিনি উপকৃত হবেন। বিশেষ করে মহিলারা যারা বাড়িতে বিভিন্ন ভাবে টাকা সঞ্চয় করেন তাদের জন্য সঞ্চয়পত্র একটি ভাল মাধ্যম ইনভেস্টম্যান্টের জন্য। কারন সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে ১০০% মুনাফা নিরাপদ, মেয়াদ শেষে লাভ সহ আপনার টাকা সম্পূর্ণ ফেরত পাবেন। 






কোন মন্তব্য নেই

graphixel থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.